বাংলা চলচ্চিত্র জগতে যে ছাপ রেখে গেলেন পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত


না ফেরার দেশে চলচ্চিত্র পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। বৃহস্পতিবার সকাল ছয়'টা নাগাদ ঘুমের মধ্যেই দক্ষিণ কলকাতার ইএমবাই পাশের ধারে অভিষিক্তা মোড়ে নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। গত বেশ কিছুদিন ধরেই বয়সজনিত কারণ ও কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি, ডায়ালিসিসও চলছিল তাঁর।


চলচ্চিত্র ও সাহিত্য জগতের এক প্রসিদ্ধ নাম বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। তার অন্যতম সিনেমাগুলির মধ্যে রয়েছে ‘চরাচর, তাহাদের কথা, উত্তরা, নিম অন্নপূর্ণা, লাল দরজা, কালপুরুষ, গৃহযুদ্ধ, মন্দ মেয়ের উপাখ্যান, ফেরা, বাঘ বাহাদুর প্রমুখ। উত্তরা ও স্বপ্নের দিন ছবি দুইটির জন্য পরিচালক হিসাবে জাতীয় পুরস্কার পান তিনি। এছাড়াও তার পাঁচটি সিনেমা সেরা ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পায়।


১৯৪৪ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি পুরুলিয়ার আনারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। বাবা ছিলেন রেলের চিকিৎসক। ফলে বাবার চাকরি সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতেন তিনি। অর্থনীতি নিয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। অর্থনীতির অধ্যাপক হিসাবেও বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। ১৯৬৮ সালে তথ্যচিত্র তৈরি করে পরিচালনায় হাতে খড়ি হয়েছিল বুদ্ধদেবের। ২০১৮ সালে তার শেষ সিনেমা ছিল উড়োজাহাজ। কবি হিসাবেও সুনাম কুড়িয়েছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। তার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে গভীর আড়ালে, কফিন কিম্বা সুটকেশ, শ্রেষ্ঠ কবিতা, ভোম্বলের আশ্চর্য কাহিনী ও অনন্য কবিতা। 


তাঁর মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্রে এক স্বর্ণ যুগের অবসান হল। বুদ্ধদেবের মৃত্যুতে প্রথম শোকজ্ঞাপন করেন পরিচালক ও তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী। শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জি। এক শোকবার্তায় মমতা  লেখেন ‘বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তার কাজের মধ্যে দিয়ে তিনি চলচ্চিত্রের ভাষায় কবিতার জন্ম দিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে চলচ্চিত্র জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল। তাঁর পরিবার, পরিজন ও গুণগ্রাহীদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’


এদিন দুপুরে প্রয়াত পরিচালকের বাড়িতে গিয়ে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, অভিনেতা দেবদূত ঘোষ, শঙ্কর চক্রবর্তী, পাওলি দাম। বিকালে কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশান ঘাটে সর্বসাধারণের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ১০ মিনিট তার মরদেহ শায়িত থাকবে। পরে সেখানেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

Post a Comment

0 Comments